সৌন্দর্যের রং কী ?

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি10885105_10152682217336989_1931105358854168014_n(1)
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

রঙের সৌন্দর্য অনুসন্ধান ও অনুধাবন নতুন নয় ।  রবীন্দ্রনাথ শ্যামা মেয়ে বলে সৌন্দর্য এঁকেছেন কালো হরিণ চোখে । হুমায়ূন আহমেদ কালোর সৌন্দর্য দেখেছেন মায়াবতী নামের আড়ালে, সাদাকে রূপবতী আখ্যা দিয়ে ! কিন্তু সৌন্দর্য ধারণাটিরর সাথে সাদা-কালোর সম্পর্ক ঠিক কোথা থেকে শুরু, বলা কঠিন ।  তবে শরীরের ত্বকের ফর্সা রং নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকান ঔপনিবেশিকতা যে গোটা বিংশ শতক জুড়ে কালোদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করেছে সেটা সুবিদিত । বর্ণবাদের ভয়াল থাবা থেকে মুক্তির লড়াইয়ের সে ইতিহাসও অনেক ভয়াবহ । ভয়ানক কুৎসিত, অসুন্দর সেই রাজরূপ ।  সঙ্গতকারণেই সুন্দর শব্দটি ব্যাখ্যার দাবি রাখে ।  যদিও শুরুর গল্পটি কিন্তু দারুণ ।

গ্রীক মিথলজিতে সুন্দরের দেবতা ছিল নার্সিসাস ।  নিজের রূপ-লাবণ্যে সে এতই আত্মমগ্ন ছিল, যে কাউকেই সে অপমান করতো। কেউ একবার প্রেম প্রস্তাব দিলে তাকেও সে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করায় প্রতিশোধের দেবতা নেমেসিস দিলো অভিশাপ। ভুলিয়ে পুকুর পর্যন্ত নিয়ে এলো তাকে। পুকুরের পানিতে নিজের প্রতিরূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে উপভোগের নিমিত্তে সৌন্দর্য ছুঁতে ছুঁতে আপনভোলা হয়ে আস্তে আস্তে সেখানেই ডুবে মরে সে ।  একই জায়গায় পরে সুন্দর এক ফুলগাছ জন্মে, নাম হয় নার্সিসাস। নার্সিসাস শব্দের অর্থ সুন্দর । ধারণা করা হয়, এই সুন্দর থেকেই সৌন্দর্য, সৌন্দর্যতত্ত্ব ইত্যাদি অনুশীলনের শুরু।

আচার্য সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত বলেছেন, সৌন্দর্য একটি বিশেষ সামঞ্জস্য বা পরিচয়ের বোধ ।  প্লেটো সৌন্দর্যানুভূতিকে নির্মল আনন্দানুভূতির সাথে তুলনা করেছেন ।  রবীন্দ্রনাথ যেমন সৌন্দর্যকে রুচির সাথে এক করে দেখেছেন তেমনি কীটস দেখেছেন সত্যের সাথে অভিন্নভাবে, বলেছেন-Truth is beauty, beauty is truth.

অবনীন্দ্রনাথ সৌন্দর্যের সন্ধান নামক প্রবন্ধে বলেছেন-পন্ডিতের সামনে এসে সুন্দর দায়গ্রস্থ হল-প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠলো সুন্দরকে নিয়ে-তুমি কেন সুন্দর, কিসে সুন্দর ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু অদ্ভুতভাবে ক্ষমতাকাঠামোতে নানা সময়ে নানাভাবে মানুষের গায়ের ত্বকের রং কে সুন্দর হিসেবে দেখা- না দেখার বিষয়টি প্রতিভাত হলো । আজ বর্ণবাদের অনেকটা বিনাশ হলেও রং- কেন্দ্রীক আভিজাত্যের রাহু দূর হয়েছে ,বলা যাবে না । সাদা যে সুন্দর এবং অভিজাত, সেই ধারণা সাধারণের মনে বহাল আছে। এ ধারণা বহাল রাখতেই সাদা কে সুন্দর হিসেবে প্রচারিত ও প্রসারিত করা হচ্ছে, ঔপনিবেশিক মন নিয়ে আমরাও দুধে আলতা রং নিয়ে সুন্দরচর্চার মিথ বহন করে চলছি ।

সারাবিশ্বে তাই সুন্দরকে ফর্সা বা সাদা হিসেবে প্রতিপন্ন করার সকল চেষ্টা বাণিজ্যের কারণ হয়েও ঘুরপাক খাচ্ছে । গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন হচ্ছে, কালো নারীর বিয়ে ঠেকে যায় -সে অসুন্দর ! সাদা-কালো ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমাজ বৈষম্যযুক্ত হয় । হতে থাকে ।  সামনে চলে আসে রং মেখে সাদা হও-সেটাই সুন্দর । সেই রং হলো রঙ ফর্সাকারী ক্রীম ও নানাবিধ কসমেটিকস ব্যবহারে লব্ধ রং। মানুষ হারিয়ে যায় রং-এ। বুদ্ধি, শিক্ষা, সতেজতা চাপা পড়ে । সুন্দর মানেই ফর্সা- এরকম আদর্শ অনুভূতিতে আমাদের মনে জাগ্রত ও ভাসতে থাকে। আমরা সুন্দরকে রং এর বিভাজনে হারিয়ে ফেলি ।

কিন্তু সৌন্দর্য তো একটি ধারণা । এটি এমন এক ইন্দ্রিয়জ অনুভূতি যা চোখে প্রশান্তি দেয়, মনে আনন্দ জাগায় । স্নায়ু সতেজ হয় । প্রাণে দোলা লাগে । এটি ভাল লাগার, মনে ধরায় বিষয় । কানে শুনতে ভাল লাগলে শোনার বিষয়টিও সুন্দর । গান সুন্দর,  আবৃত্তি সুন্দর,  কথা সুন্দর,  লেখা সুন্দর,  শ্রম সুন্দর- শিল্পই সুন্দর । কাজেই সুন্দর শব্দটি বহুধা শব্দ অনভূতি অভিধায় অভিহিত।

মনও সুন্দর হিসেবে আখ্যায়িত হয়, যদিও কিভাবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হলে মনকে চেনা যায় তা প্রাণের মতোই অপর এক সুন্দর অমীমাংসিত রহস্য । সুন্দরও তাই বহুরূপী রহস্যের আধার । নানা সময়ে তাই সুন্দরকে নানাভাবে দেখা হয় এবং দেখানো হয় । এটি তাই প্রাকৃতিক যেমন,  কৃত্রিমও হতে পারে,  হয়ে থাকে । একদিকে স্বমহিমায় প্রকাশিত ও প্রস্ফূটিত আবার অন্যদিকে বিকশিত প্রচারও হয়ে থাকে।

প্রকৃতি সুন্দর, বৈচিত্র্যে সুন্দর । অদ্ভূত সজ্জায় মানুষ সুন্দর । শৃঙ্খলা সুন্দর. শৃঙ্খল আবার অসুন্দর ।  মা সুন্দর, সন্তান সুন্দর ।  প্রেম সুন্দর । মায়া সুন্দর । মায়াবী চোখ, অন্য সুন্দর । চুল সুন্দর। সাদা ও কালো । পশ্চিমা সাদা চুল আমাদের কালো চুল ।  আমাদের চুল পাকলে আবার বলি, সাদা চুল অসুন্দর । সোনালী চুল কিন্তু তাদের সুন্দর। কবি বলেন, সত্য সুন্দর। স্রষ্টা সুন্দর, সৃষ্টি সুন্দর। অপূর্ব, অপরূপ. আশ্চর্য, অদ্ভূত সব সুন্দরের প্রতিরূপ প্রতিশব্দ। গাছ, ফুল, নদী, পাহাড় সব সুন্দর।

স্থাপত্য, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বহুতল দালান আবার কারাগারও সুন্দর। সুন্দর-অসুন্দও আসলে ভালো বা খারাপ নয়। আলো ছায়ার মতো। আলো সুন্দর, ছায়া সুন্দর। আলোছায়া সুন্দর। সালমান সুন্দর, শাহরুখ সুন্দর। রজনীকান্ত সুন্দর,  মোশারফ করিম সুন্দর। মুনমুন সুন্দর, ময়ূরী সুন্দর। কারিনা সুন্দর, প্রিয়াঙ্কা সুন্দর। কে সুন্দর, কীসে সুন্দর, কেন সুন্দর । আলোচিত ও বিতর্কিত। যা যা তা তা। সবই নির্মাণ ।  অনুভব ও উপভোগ ।  ভোগের সুযোগে কেউ লাভে সুন্দর, কেউ লোভে ।  কার কিসে লোভ, কার কিসে লাভ ।  পরিস্থিতি নির্মাণ করে পরিবেশ,  নাম দেয়- ইহা সুন্দর।

রাধা সুন্দর, কৃষ্ণ সুন্দর ।  প্রেম, পরকীয়াও সুন্দর । এই যে সুন্দর তা সময়ে সুন্দর, অসময়ে অসুন্দর। একই সুন্দর স্থান ভেদে অসুন্দর, সময়ে ভেদে আজকের অসুন্দর কাল সুন্দর। শক্তিই সুন্দর। গবেষক লরা মালভী দেখিয়েছেন, পুরুষ কীভাবে নারীকে দেখে অর্থাৎ নারী হলো দেখার বস্তু-Women to look at  । তাই নারীর চলন বলন সব দেখতে ভাল লাগতে হয়,তথাকথিত সুন্দর করতে হয়। তার ঠোঁট চিকন, বুক উন্নত,  গায়ের রং সব অংশেই তাই ভিন্ন ভিন্ন রং, ভিন্ন ভিন্ন সুন্দরের নির্মাণ ।

শ্বেতাঙ্গ শাসন টিকিয়ে রাখতে সাদা রং সুন্দর, এ অভিজাত প্রচারণা চলে। নারীকে বস্তু হিসেবে দেখার প্রক্রিয়ায় শরীর নিটোল সুন্দর হয়, লিঙ্গীয় শাসন- শোষণে রূপ পরিগ্রহ করে। প্রথাগত লিঙ্গীয় শাসন বজায় রাখার শিকার নারী, বস্তু হিসেবে নিজেকে ফর্সা থেকেও সাদা হিসেবে তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । কালোকে তো বটেই, নানাভাবে প্ররোচিত করা হয়। নারী সুন্দর হতে শিখে শুধু ক্রীম মাখে । সে ফর্সা ধারণাকে সুন্দরের প্রতিশব্দ হিসেবে ধারণ করে, লালনও করে । মিথ হয়ে যায়- পুরুষের শক্তি সুন্দর, নারীর সৌন্দর্য ।  শাসন-শোষণে রং মারাত্মক বিষয় হিসেবে ভূমিকা রাখতে শুরু করে।

ক্রীম মেখে মেয়েটি সপ্তাহ থেকে সপ্তাহান্তে ফর্সা হতে থাকলে তার চাকুরীর সম্ভাবনা বেড়ে যায়, বিয়ের বাজার খুলে যায় ।  অদ্ভ’ত অসামঞ্জস্যতার পুরুষ শিক্ষিত হয়ে স্মার্ট হয়, নারী মুখে সজ্জা করে তবে সুন্দর হয় । তাই বলা হয়- সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র ।  দেশীয় টিভি রং ফর্সা নারীতে সয়লাব । সমালোচনা হয় তাদের অনেকের উচ্চারণ সুন্দর নয়। তখন তো সুন্দরের সংজ্ঞায় কালো- সাদা অতিক্রম করে ভাষাই প্রাধান্য পায়। কী সুন্দর কথা বলে! কী সুন্দর গান, আবৃত্তি ।

মধু কণ্ঠ-আহা কী সুন্দর ! কথা বলতে লাগে শিক্ষা, থাকতে হয় বুদ্ধির ঝলক । চলনে বলনে সপ্রতিভতাই সুন্দর। নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশ অসম্ভব অনুশীলনের কাজ ।  তাই সৌন্দর্য, চর্চার বিষয় ।  রং মেখে কালো থেকে সাদা হওয়া মানে সুন্দর এই ধারণার দিন শেষ ।  নতুন সময় আজ-সুন্দরও নতুন। পৃথিবীর সচেতন মানুষের সুন্দরের পাঠ এখন ভিন্ন।

অনেক খেয়ে মোটা হলে বলা হয়, সংযমই সুন্দর। কম খাও। বলা হয় পরিমিত খাও। এই যে পাঠ ভিন্নতা, তা দৃষ্টির ভিন্নতাও তৈরি করে। জিম করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ফিগার সচেতন হয়। শরীর ঠিক রাখে, নীরোগ থাকে । অতএব, সুস্বাস্থ্যই সুন্দর। নারীবাদী চিন্তার প্রকোপ থামাতে কৌশল হিসেবে মেন্জ ক্রিম ও কসমেটিক্স রং এর আদলে পড়েছে । পুরুষ ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করছে।সুন্দরও কী হচ্ছে  ?  তাহলে কে সুন্দর, কী সুন্দর–

বিপাশা সুন্দর, পাওলী দাম সুন্দর, সুবর্ণা সুন্দর, শাওন সুন্দর ।  হুমায়ূন সুন্দর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সুন্দর। সেলিনা সুন্দর, তসলিমা সুন্দর । আমি সুন্দর, তুমি সুন্দর । দেহে, মনে, জ্ঞানে । কালো বা সাদায় নয়- চোখে, কানে মনে লাগাই সুন্দর ।  সৌন্দর্য হল নিজের প্রকাশ, অন্যকে ছুঁয়ে যাওয়া ।  তাই ছুঁয়ে থাকার, ছুঁয়ে যাওয়ার, ভালো লাগার অনুভূতিই সুন্দর।

অমিতাভ রেজা/ মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর কাজ সুন্দর আর জেনি/ তিশার শরীর সুন্দর,  এমনটি তো নয় । কাজের মাধ্যমে ফারুকী সুন্দর; মডেলিং ও অভিনয়ের অভিব্যক্তিতে সুন্দর হলো জেনি/তিশা । তাই প্রচেষ্টা সুন্দর, শ্রম সুন্দর,  কর্ম সুন্দর । কৃষক সুন্দর, কিষাণী সুন্দর !

নগ্নতাও সুন্দর । ভূমিষ্ঠ শিশু উলঙ্গ, সুন্দর। পিকে আমির খান, টাইটানিক কেট নগ্ন হয়েও সুন্দর । শিল্প, সাহিত্যে ও সিনেমায় ।  আবার পোষাক ছাড়াই অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী সুন্দর । স্বল্পবসনা হয়েও অনেকে সুন্দর ।  চিত্রকর্মে সুন্দর ।  চলছে সুন্দরের বিভিন্নমুখী বয়ান, বাহাস বিতর্ক ।  আবার কুতর্ক, কূটতর্ক, ঝগড়া, ফ্যাসাদ সব অসুন্দর । যুদ্ধ অসুন্দর সংগ্রাম সুন্দর। আত্মপ্রতিষ্ঠা, আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মশক্তিই সুন্দর।

সুন্দর উদ্ভাসিত হয় বস্তুর অর্জিত রূপে, সামঞ্জস্যে ।  চিত্রকলার রূপ দেশ বা মাত্রা এবং রঙের আনুপাতিক ব্যবহার, সঙ্গীতে সুরের সঙ্গতিতে, কাব্যে ভাব ভাষা ছন্দ ইত্যাদির সাবলীল প্রয়াসে। অসুন্দরের প্রকাশ এদের অনুপস্থিতিতে বা অসঙ্গত ব্যবহারে, বিকৃতিতে। অসুন্দর যে অসুন্দর, সুন্দর নয় বলেই,  সুন্দরের পরিচয় সে সুন্দর বলেই ।

সৌন্দর্যকে ক্রোচে তাই বস্তু-বহির্ভূত বলেও চিহ্নিত করেছেন। বলেছেন সৌন্দর্য বস্তুতে নেই,  আছে মানুষের কর্মকান্ডে ।  সৌন্দর্য কোন কোন বস্তুর অন্তর্নিহিত গুণ নয় বরং তা প্রতীতির ব্যাপার। কল্পনার সৌন্দর্য ছাড়া নিসর্গের কোন অংশই সুন্দর নয় এবং শিল্পীর হাতে অধিকতর সুষমা পায়নি এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোথাও নেই ।  যে নক্সী কাথায় যুগের পর যুগ একই নক্সার পুনরাবৃত্তি ঘটে তা সুন্দর হলেও চমৎকার নয়, মনলোভা নয়।  কিন্তু হঠাৎ কোন শিল্পী তাতে শিল্পগ্রাহ্য নতুন নক্সা, রং ও নতুন মাত্রার প্রবর্তন করে তাহলে তা অত্যন্ত আকষর্ণীয় হয়ে ওঠে। শিল্পে আস্মিকতা আছে. কিন্তু সেই আকস্মিকতা যদি শুধু চাকচিক্যের আমদানীর নিমিত্তে হয়, তাতে পুলক থাকে না ।  আকস্মিকতা হবে চিন্তা, বোধ বা প্রকাশের চমৎকারিত্ব ও নতুনত্ব।

রূপকথার রাজকন্যা যারা এক “আদর্শ সৌন্দর্যের” প্রতীক, রাজপুত্র সেই সৌন্দর্যের সাধক ।  রূপকথার কাঠামো ও প্রতীকী যাত্রায় শিল্পীর নিজস্ব যাত্রা ও পরিচয়টি লুকায়ত থাকে ।  তিনি নিজের রূপের ভিতর দিয়ে রূপের অতীতকে, অসুন্দরের ভিতর দিয়ে সুন্দরকে আবাহন করেন । বাস্তবের রাজপুত্রের ধারণা রং ফর্সায় নিহীত ।  ছেলেটি রাজপুত্রের মতন, মানে সে ফর্সা বা মেয়েটি রাজকন্যা মানে সেও ফর্সা ।  এগুলো হলো একদিকে জিইয়ে রাখা সামাজিকতা এবং অন্যদিকে ক্ষমতা বা ব্যবসার রাজনীতি তো বটেই ।  সাদা মানে সুন্দর হলো মনের উপনিবেশিকতা ।

তাই দুধে আলতা রং হলেই সুন্দর,  এটি মিথ ।  নৌকার জন্য আলকাতরাই সুন্দর হয় ।  মানুষকে তাই মানুষই হতে হয় ।  সাদা বা কালো নয় । সুন্দর হলো আত্মবিশ্বাসী ও নির্ভয় হৃদয় ।  সুন্দর হলো সজীব প্রাণ,  নির্মল হাসি অফুরান । সুন্দর হলো সত্য ।  সুন্দর হলো সাহস।  সুন্দর সৌরভ,সুন্দর বৈভব । সুন্দর হলো শিক্ষা, সুখ ও সমৃদ্ধি ।  সুন্দর মানে আনন্দ । রসগঙ্গাধর বলেন, লোকোত্তরাহলাদজ্ঞানগোচরতা-অর্থাৎ সজ্ঞান বিবেচনার বাইরে আনন্দ সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া তাই সৌন্দর্য ।  অতএব- সুন্দর হলো শিল্প, সুন্দর হলো সুন্দর ।  ফর্সা অথবা কালো নয়  ! !

রাজীব মীর
সহকারী অধ্যাপক,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা ।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G